ভোক্তা অধিদপ্তর অফিসে একটা শুনানি ছিল। অভিযোগ ছিল খাবার নিয়ে। খাবারের দাম বেশি রাখায় অভিযোগ জানিয়েছিলাম। হিয়ারিং ছিল সকাল সকাল। বাসা থেকে প্ল্যান করে বের হয়েছি, কাজ শেষে করে ক্যাম্পাসে যাব।
কিন্তু কাজ শেষ করে দেখি ক্যাম্পাসে যেতে এখনো ঘণ্টা দুয়েকের মতো বাকি। এদিকে রোদ ও প্রচণ্ড। কী করবো না করবো ভাবতে ভাবতেই হাঁটা দিলাম। একটা রেস্টুরেন্টের সামনে এসে দাড়াতেই কেন যেন লাচ্ছি খেতে ইচ্ছে করছিল।
সাথে বান্ধবী ছিল। ওরে জিজ্ঞেস করলাম, লাচ্ছি খাবে কিনা। সে বললো, খাওয়া যায়। অনুমতি যেহেতু দিয়েছেই আর দেরি না করে ভেতরে ঢুকে গেলাম। মাথায় ছিল এসির ঠাণ্ডা বাতাসে বসে বসে লাচ্ছিতে চুমুক দিয়ে গরমটা একটু কমাবো। তাই শহরের ঝাউতলায় অবস্থিত এবি ফুডে গেলাম। এবি ফুড খু্ব নামিদামি একটি রেস্টুরেন্ট।
এই রেস্টুরেন্টটি আমি ব্যক্তিগতভাবে পছন্দ করি কারণ এরা খুব পরিষ্কার -পরিচ্ছন্ন এবং খুব গোছানো। এদের সার্ভিস নিয়ে আপনি কখনো অসন্তুষ্ট হবেন না।
রেস্টুরেন্টটির পরিবেশও অসাধারণ। ভেতরে যথাযথ আলো বাতাসের ব্যবস্থা রয়েছে। রাস্তার পাশেই অবস্থিত, কিন্তু এর ভেতরে কোনো ধূলা বা কোনো ধরনের ময়লা আপনার চোখে পড়বে না।
প্রচণ্ড গরমে এসির মৃদু শীতল ঠাণ্ডা বাতাস যেন এক অদ্ভুত রকমের স্বর্গীয় অনূভুতি এনে দিচ্ছিলো। টেবিলের উপরই মেন্যু কার্ড রাখা ছিল। লাচ্ছি খাবো ভেবেই যেহেতু গিয়েছি তাই লাচ্ছি তো অবশ্যই অর্ডার করবো। আর সাথে ফাস্টফুড হিসেবে কী খাবো বুঝে উঠতে পারছিলাম না।
হঠাৎ একটা আইটেমে চোখ গেল। পিজ্জা বান। তো আমরা যেহেতু দুইজন ছিলাম তাই দুই গ্লাস লাচ্ছি আর একটি পিজ্জা বান অর্ডার দিলাম।

পিজ্জা বান; Source: লেখিকা
অর্ডার দেবার ২ মিনিটের মধ্যেই ওয়েটার খাবার নিয়ে হাজির। পিজ্জা বান টেবিলে দিয়ে গেল। সাথে টমেটো সস।
খাবারের বিবরণ
পিজ্জা বান
পিজ্জা বান বলতে গেলে একটা অন্যরকম খাবার ছিল। পিজ্জার স্বাদও পাচ্ছিলাম আবার অনেকটা বার্গারের স্বাদও। বানের উপর পিজ্জাতে যে সকল উপাদান দিয়ে পিজ্জা বানানো হয় সেসব উপাদানগুলোর সবই ছিল।
প্রথমে এক টুকরো করে মুখে দিলাম। প্রথম কামড়েই চিকেন সসেজ, ক্যাপসিকাম, চিকেনের টুকরো মুখে একটি অসাধারণ স্বাদ তৈরি করলো। আমি আসলে পুরোপুরি অবাক হয়ে গিয়েছিলাম, এতো কম দামে এরকম একটি খাবার পেয়ে!
চিকেন সসেজ আমার খুব বেশি প্রিয়। তাই আরো বেশি ভালো লাগছিলো পিজ্জা বান খেতে। এবার আরেকটা টুকরো মুখে দিলাম টমেটো সসের সাথে।

এবি ফুডের পিজ্জা বান; Source: লেখিকা
পুরো পিজ্জা বানটিতেই চিকেন সসেজ আর ছোট ছোট চিকেনের টুকরোর সাথে ক্যাপসিকাম, পেঁয়াজ, টমেটো কুচি ছিল।
আপনার যদি খুব বেশি পিজ্জা খেতে ইচ্ছে করে আর পকেটে খুব একটা টাকা পয়সা না থাকে তাহলে পিজ্জা বান আপনার জন্য একটি আদর্শ খাবার। কম টাকায় একেবারে পিজ্জার স্বাদ যাকে বলে সেটাই আপনি এই খাবারটিতে পেয়ে যাবেন।
লাচ্ছি
একটু পরেই চলে এলো লাচ্ছি। লাচ্ছির রং অসাধারণ ছিল। দেখেই মনে হচ্ছিলো এটি খেতে খুবই মজাদার হবে। আসলেও তাই ছিল। আগে শুনেছিলাম এবি ফুডের দই খুব মজা। কখনো খাওয়া হয়নি।
তবে লাচ্ছি খেয়েই বুঝেছি তাদের দই আসলেও মজাদার হবে। নিজস্ব দই দিয়েই বানিয়ে দিয়েছিলো লাচ্ছি। কনডেন্সড মিল্কের মতো একটা ফ্লেভার পাচ্ছিলাম। লাচ্ছিটা খুব ঘন ও হয়েছিল।

লাচ্ছি; Source: লেখিকা
পাতলা লাচ্ছি খেতে আমার খুব একটা ভালো লাগে না।এই লাচ্ছিটি যেমন ঘন ছিল তেমন মিষ্টিও, আমার জন্য পারফেক্ট ছিল। তাই খুব আগ্রহ নিয়েই আমি লাচ্ছিটি শেষ করেছিলাম। যদিও ইচ্ছে করছিলো আরেক গ্লাস খেয়ে যাই, কিন্তু ততক্ষণে আমার হাতে আর যথেষ্ট সময় ছিল না।
অভ্যন্তরীণ সাজসজ্জা

রেস্টুরেন্টের ভেতরে বসার জায়গা; Source: লেখিকা
রেস্টুরেন্টটির ভেতরের সাজসজ্জা নজরকাড়া। পর্যাপ্ত আলো রয়েছে ভেতরে। লাইটিং ব্যবস্থাও চমকপ্রদ ছিল। ভেতরে বসার জায়গাগুলোতে ছিল সোফা। সোফাগুলোও খুব সুন্দর ছিল। বসেও আরাম পেয়েছি।
টেবিলের উপর মেন্যু কার্ড, টিস্যুর বক্স রাখা আছে। আপনি আপনার প্রয়োজনমতোই টিস্যু ব্যবহার করতে পারবেন। কাউকে টিস্যুর জন্য ডেকে বিরক্ত হতে হবে না।

রেস্টুরেন্টের ভেতরের সাজসজ্জা; Source: লেখিকা
দেয়ালে ছিল বিভিন্ন রকমের পেইন্টিং। আর সামনের দেয়াল ছিল পুরো কাঁচের তৈরি। যার কারণে রেস্টুরেন্টটির আলো নিয়ে কোনো সমস্যা ছিল না।
ভেতরে শীততাপ নিয়ন্ত্রিত ব্যবস্থা, ফ্যান দুটোই ছিল। আপনি পরিবার-পরিজন নিয়ে এখানে খুব আরামদায়কভাবেই খেতে পারবেন।
পরিবেশ
আগেই বলেছি এদের পরিবেশ নিয়ে কেউ অসন্তুষ্টি হবেন না। এরা খুব পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন প্রিয়। একজন মানুষ উঠে যেতে যেতেই দেখলাম ওয়েটার এসে সাথে সাথেই টেবিল পরিষ্কার করে ফেললো। আরেকজন গ্লাস কিনার দিয়ে প্রতি ঘণ্টাখানেক পর পরই সামনের কাঁচের তৈরি দরজাটি পরিষ্কার করছেন।

রেস্টুরেন্টের ভেতরের দৃশ্য; Source: লেখিকা
মানুষজন এলে ওয়েটার দরজা খুলে ভেতরে নিয়ে আসছে। টেবিল দেখিয়ে দিচ্ছে বসার জন্য। মোট কথা, এবি ফুডের পরিবেশ সন্তোষজনক। পরিবার পরিজন কিংবা প্রিয় মানুষ নিয়ে একসাথে বসে কিছু খাবার জন্য এবি ফুড একটি যথাপোযুক্ত জায়গা।
সার্ভিস
এদের সার্ভিস নিয়ে আপনি কখনো কোনো অভিযোগ জানাতে পারবেন না। সার্ভিস নিয়ে এরা বেশি সচেতন। আপনি যেয়ে বসার ৫ মিনিটের মধ্যেই এসে জিজ্ঞেস করে যাবে অর্ডার দেবেন কিনা!
আর অর্ডারের ৫ মিনিটের মধ্যেই খাবার টেবিলে চলে আসবে। খাবারের মাঝখানে এসে জিজ্ঞেস করে যাবে কিছু লাগবে কিনা। বিল দিতে বললে সাথে সাথেই রেডি করে দিয়ে যাবে। সার্ভিস নিয়ে বলতে গেলে আপনাকে ১০/১০ দিতেই হবে।
দাম

মেন্যু কার্ড; Source: লেখিকা
পিজ্জা বান- ৬০ টাকা
লাচ্ছি- ৭০ টাকা
সবমিলিয়ে আমাদের খরচ হয়েছিল ২০০ টাকা।

মেন্যু কার্ড; Source: লেখিকা
রেটিং
পিজ্জা বান- ৮.৫/১০
লাচ্ছি- ৮/১০
লোকেশন
শহরের যেকোনো জায়গা থেকে ঝাউতলা আসবেন রিকশা দিয়ে। ঝাউতলা মুন হাসপাতাল থেকে একটু সামনে আগালেই পেয়ে যাবেন এবি ফুড।
এদের আরো তিনটি শাখা রয়েছে কুমিল্লাতে এবং একটি নতুন শাখার উদ্বোধন হবে শীঘ্রই।
Feature Image: AB Food