সপ্তাহে ৫ দিন শান্তিনগর-মিরপুর-শান্তিনগর আসা যাওয়া শুরু করছি যেদিন থেকে, তারপর থেকে যদি কখনো ঠিক করি যে, এই জায়গায় পরের বুধবার যাবো অথবা এই রবিবার যাবো তবে সেই যায়গায় যাওয়ার সুযোগ হয় ১ মাস পর।
ধানমণ্ডিতে দি ওল্ড স্ট্রিট নামে একটি রেস্টুরেন্ট হয়েছে জুন এর দিকে, প্ল্যান করেছিলাম তার কিছুদিন পরেই কিন্তু অবশেষে যাওয়া হলো গতকাল। ভার্সিটি থেকে ক্লাস করে ট্রাস্টের বাসে বাসায় ফেরার পথে অনেকক্ষণ ধরে ভাবলাম, বাসায় গিয়ে ঘুম দেব নাকি দি ওল্ড স্ট্রিটে গিয়ে পেটপূজা করবো?
কারওয়ান বাজার নেমে ৫মিনিট আবার চিন্তা করলাম। পরে উবার ডেকে ঠিক করলাম, আজকে যাওয়াই যায় কারণ এর মাঝে আমার স্টুডেন্ট আমাকে ফোন দিয়ে জানালো যে, আজকে সে পড়বে না। উবারের প্রোমো কোড ছিল, এর কারণে ভাড়া আসলো ৪০ টাকা।

দি ওল্ড স্ট্রিট; source: লেখিকা
দি ওল্ড স্ট্রিট-এর ঠিকানা
৭৫৪ সাতমসজিদ রোড, ৬ তলা, ধানমণ্ডি, ঢাকা।
সাতমসজিদ রোডে আবাহনি মাঠ এর পাশে যেখানে স্টার কাবাব এন্ড হোটেল আছে, তার উপরেই অবস্থিত। সিঁড়ি দিয়ে ২ তলা উঠার পর লিফট পাবেন। নিচে দাঁড়িয়ে দুশ্চিন্তা করার কোনো কারণ নেই যে, কীভাবে ৬ তলা উঠবো! আমরা যা করেছিলাম।
ডেকোরেশন
লিফট থেকে নেমেই চোখে পড়বে সাদা একটি দরজা এবং উপরে হলুদ অক্ষরে লেখা, “দি ওল্ড স্ট্রিট”। দরজা দিয়ে ঢুকে চোখে পড়লো সোজা বরাবর কাউন্টার, ডানে অপেক্ষা করার জায়গা আর বামে দুইটি কিউট চেয়ার। রাস্তার পাশে হওয়ার কারণে লাইটিং খুব ভালো ছিল।
এরপর ডানে গেলে ছিমছাম সাজানো জায়গাটিতে দুইজন, চারজন, ছয়জনের বসার আলাদা জায়গা। মাথার উপরে স্পট লাইট, হলুদ বাতির বাল্ব। সিলিং এর দেয়াল ছিল কালো রঙের। সাইডে আলাদা স্মোকিং জোনও আছে। স্মোকিং জোনের ডেকোরেশনও খুব ভালো লেগেছিল আমার, যদিও একটু গরম ছিল যেহেতু সেখানে এসির ব্যবস্থা নেই। একটি কুলার ছিল। ইট দিয়ে করা ডেকোরশন মূলত।
আবাহনি মাঠ দেখা যায় পুরোটা সেখান থেকে । একটি ব্যাপার যা ভালো লেগেছে তা হল- তারা চেষ্টা করেছে একেক দেয়ালে একেক রকম ডিজাইন দেওয়ার, যেনো পুরো জায়গাটি দেখতে একইরকম না লাগে। একটি দেয়ালে ছিল সিটিস্কেপ এর একটি চিত্র। একটি টেবিল ছিল বাকি টেবিলগুলো থেকে দূরে। সবথেকে ভালো লেগেছিল ওই টেবিলটি।
অপেক্ষায় ছিলাম কখন সেই টেবিলের কাস্টমারগুলো যাবে এবং আমরা সেখানে বসতে পারবো। আমি শিওর বাকিরা গেলেও সেই টেবিলের দিকেই আগে চোখ পড়বে। তিনজন বসতে পারবে সেই টেবিলে। আমাদের বসার কিছুক্ষণের মধ্যেই জায়গাটি খালি হয়ে গেলো। আর আমরা ওই টেবিলটিতে শিফট হয়ে গেলাম।
টেবিলের উপরেই মেন্যু কার্ড রাখা ছিল। ৪ টি আলাদা মেন্যু কার্ড, ৪ প্রকারভাবে আলাদা করা। একটিতে ড্রিঙ্কস, একটিতে কম্বো মেন্যু, একটিতে এপিটাইজার, একটিতে সেট মেন্যু। যেহেতু এই প্রথম গিয়েছি তাই অনেকক্ষণ ধরে দেখলাম যে কী কী আছে। তারপর অর্ডার দিলাম।
যা অর্ডার দিয়েছিলাম
১. ক্রেমলিন ফিস্ট
২. বাটার চিকেন এর সাথে বাটার নান
সাথে ড্রিঙ্কস হিসেবে এভেইলেবল ছিল শুধু কোক আর স্প্রাইট। আমি স্প্রাইট নিলাম, আর আমার ফ্রেন্ড কোক নিয়েছিল।
প্রথমে তারা ড্রিঙ্কস সার্ভ করলো। এতটাই পানসে ছিল যে, কোনো টেস্টই পাওয়া যাচ্ছিল না। ডেকে বললাম। সাথে সাথে চেঞ্জ করে দিল। সাথে বরফ দেওয়ার কারণে সম্ভবত এমন হয়েছিল। একটি সমস্যা যা আমার চোখে পড়লো, তাদের ওয়েটার সংখ্যা একটু কম। ৩/৪ জন ছিল সম্ভবত। কিন্তু সার্ভিস খুব ভালো, ব্যবহার খুব ভালো ছিল, বারবার এসে জিজ্ঞাসা করছিলো, কোনো সমস্যা হচ্ছে নাকি? কিছু লাগবে নাকি?
খাবারের জন্য বেশিক্ষণ অপেক্ষা করতে হয়নি। ১০মিনিটের মধ্যেই সার্ভ করে দিয়েছিল। আমি নিয়েছিলাম ক্রেমলিন ফিস্ট। তারা সাজেস্ট করলো তাদের এপিটাইজার আর ডেজার্ট আইটেমগুলো ট্রাই করার জন্য। কিন্তু আমাদের পেট ভরে যাওয়ার কারণে আর পকেট ফাঁকা হয়ে যাওয়ার কারণে বললাম, পরেরবার অবশ্যই।

ড্রিঙ্কস; source: লেখিকা
ক্রিমলিন ফিস্ট
এগ ফ্রাইড রাইস, চিকেন এল কেইভ সাথে সটেড ভেজিটেবল। সাথে গার্লিক মায়ো সস দিয়ে পরিবেশন করা হয়েছিল। সার্ভ করার সাথে সাথেই যে কমেন্ট করেছিলাম, রাইসের পরিমাণ এত কম কেনো? আপনাদেরও তাই মনে হবে। কিন্তু খাওয়া শেষে পেট ভরেছিল।
চিকেনটি ডিপ ফ্রাই করা ছিল। বোনলেস ছিল, স্বাদ ভালো ছিল। মাশরুম আমার খুব পছন্দ তাই, সবজিতে মাশরুম দেখে মন ভালো হয়ে গিয়েছিল। সাথে ক্যাপসিকাম, বরবটি দিয়ে পরিবেশন করা হয়েছিল।
বাটার চিকেন ও বাটার নান
আমার ফ্রেন্ড নিয়েছিল এটি। আমি একটু টেস্ট করে দেখেছিলাম। আরেকটু স্পাইসি হলে আরো মজা লাগতো বাটার চিকেনটি। কিন্তু পরিমাণ ভালো। বাটার নানটি পারফেক্ট ছিল- সফট ও ফ্লাফি।
দাম ও রেটিং
১. ক্রিমলিন ফিস্ট
দাম: ২৬০ (ভ্যাটসহ)
রেটিং: ৮/১০
২. বাটার নান ও বাটার চিকেন
বাটার নানের দাম: ৬০ টাকা
বাটার চিকেনের দাম: ২৩০ টাকা
এর সাথে ১৫% ভ্যাট ছিল।
রেটিং: ৭.৫/১০

ক্রেমলিন ফিস্ট, বাটার চিকেন ও বাটার নান; source: লেখিকা
সর্বমোট ৪০০ টাকা এসেছিল এই মেন্যুটির জন্য। টেস্ট,পরিমাণ ও দাম একসাথে চিন্তা করলে আমার কাছে এটি একটু বেশি লেগেছিল। আর ড্রিঙ্কস ছিল ৪০ টাকা পার গ্লাস। মোট বিল এসেছিল ৭০৫ টাকার মতন।
বাসায় আসার পর এক ছোট বোন স্টোরি দেখে বললো যে, নেক্সট বার গেলে যেনো অবশ্যই যেনো বিবিকিউ চিকেন উইথ মেশড পটেটো ট্রাই করি। এটি নাকি বেস্ট। সে নাকি দুইদিন পরপর এখানে যায়, এই আইটেম দুইটি খাওয়ার জন্য। ওভারঅল আড্ডা দেওয়ার জন্য জায়গাটি আমার খুব পছন্দ হয়েছে। ইন্টিরিওর, বসার ব্যবস্থা, সার্ভিস সবই খুব ভালো ছিল।